ম্যাডক্স স্কোয়ার মানেই আবেগের জোয়ার… আট থেকে আশির অবাধ বিচরণ এই মাঠেই…
যাঁকে ঘিরে এই উন্মাদনা,তিনি আর কেউ নন আমাদের জগজ্জননী মা,যাঁর রূপের অপরূপ ছটায় জগৎসংসার সম্মোহিত। মা ছাড়া ম্যাডক্স স্কোয়ারকে যেমন ভাবতে পারিনা, ঠিক তেমনই আবার একটা চিত্র এই মাঠকে জড়িয়ে থাকবে আজীবন, সেটা.. ফুটবল ও ক্রিকেট। আমরা যারা এই মাঠ ও পুজোকে আঁকড়ে ধরে বড় হয়েছি, তাদের কাছে এই খেলাগুলো জীবনের এক অনন্য অনুভূতি… এই মাঠ অনেক ইতিহাসের সাক্ষী। কত উল্লাস-ব্যার্থতা, কত হারা-জেতা, সবকিছুর নিরব দর্শক আমাদের এই আবেগের ম্যাডক্স স্কোয়ার…

জীবনের অনেকগুলো বসন্তই তো পেরিয়ে এলাম। এখনও এই মাঠের সামনে এলেই, শৈশবে মায়ের হাত ধরে ছোট্ট লাল বলটি সম্বল করে রোজ আসার সেই স্মৃতিগুলো, আর শৈশব-যৌবনের কাদা মেখে বাড়ি ফেরার স্মৃতিগুলো সব মনিমুক্তোর মতো ঝকঝক করে ওঠে। জীবনের সব না পাওয়া গুলোকে সহজেই পেছনে ফেলে, সামনের দিকে এগিয়ে চলার শক্তি পাই।  বিভিন্ন সময়ে ফুটবল যেন ভিন্ন ভিন্ন রূপে ধরা দিয়েছে এই ম্যাডক্স স্কোয়ারে… আমাদের ছোটবেলায় প্রতি ১৫ই আগস্টে “আর ঊমাশংকর শিল্ড” নামে একটি টুর্নামেন্ট হোত এই মাঠে। এর বেশ কিছুদিন পরে এই টুর্নামেন্টের খালি জায়গা নিল এম.পি.এল (ম্যাডক্স স্কোয়ার প্রিমিয়ার লিগ)। রীতিমত অক্সান (ভার্চুয়াল) করে ফুটবলার নির্বাচন করতেন দলের মালিকরা। রাতদিন ব্যাপি একদিনের এই টুর্নামেন্টের উন্মাদনা ছিল অপরিসীম। বর্তমান দিনগুলোতেও এই মাঠের প্রতিটা ঘাস যেন ফুটবলের গন্ধ মেখেই থাকে। এখন শুধু যে ১৫ই আগস্টেই টুর্নামেন্ট হয়না, সপ্তাহে দুই/তিন দিন নিয়ম করে ফুটবল অনুশীলন চলে এই মাঠে অবৈতনিক রূপে। একজন দক্ষ প্রশিক্ষকের কাছে প্রায় ত্রিশজন সম্ভবনাময় ছাত্ররা সঠিক নিয়মানুবর্তিতায় নিজেদের একটু একটু করে গড়ে তুলছে এই “ম্যাডক্স স্কোয়ার ফুটবল আকাদেমিতে” আমাদের স্বপ্ন এই ছেলেগুলোই একদিন কলকাতা ময়দানকে আলোকিত করবে। বেশকিছু ছাত্র এবছর সুযোগ পেয়েছে IFA অনুমোদিত নার্সারি লীগ খেলা ক্লাবে।

এতো গেল আমার আবেগের কথা। এবার আসি প্রতি বছর পাড়ায় ম্যাডক্সকে ঘিরে সাধারন মানুষের আবেগ উন্মাদনার প্রসঙ্গে। পুজোর কয়েকটা দিন এখানে আড্ডা যেন অবসম্ভাবী। কতদূর থেকে আড্ডা প্রিয় মানুষেরা আসেন এখানে মায়ের ভুবনভরা রূপটি দেখতে ও আড্ডা দিতে। পুজোর দিনগুলি আমাদের পুরো পাড়াটাও যেন গোটা পরিবারের আকার নেয়। মা আসার আনন্দে কয়েকটা দিন আমাদের যেন ঘোরের মধ্যে কেটে যায়। আমাদের অগ্রজদের দেখেছি আনন্দের সঙ্গে মায়ের কাজ করতে। মা আমাদের দিয়েও যতটুকু করিয়ে নেন, ততটুকুই করি। আবার পাড়ার কচিগুলোকে দেখি সারাদিন পুরো উদ্যমে মায়ের পায়ের কাছে থেকে, এটা ওটা করে চলেছে। অতীত-বর্তমান-ভবিষ্যৎ সন্তানদের, মা যেন যত্ন করে এক সুতোয় গেঁথে দিচ্ছেন।

পুরনো দিনগুলোকে ভুলে যাওয়ার নাম জীবন নয়, বরং ছোটবেলার সুখস্মৃতি আর ম্যাডক্স স্কোয়ারের এই ঐতিহ্য আবেগকে তরতাজা রাখার নামই বেঁচে থাকা।

জয়দীপ বসাক